কোরানে মহাউন্মাদীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান

আকাশ দেখতে আমি খুবই ভালোবাসি। রাতের মেঘমুক্ত আকাশে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা তারার মেলা কিংবা কোন এক পড়ন্ত বিকেলে মেঘেদের ছোটাছোটি, সবই ভালো লাগে। ছোটবেলায় আকাশের দিকে তাকিয়ে কত কি ভাবতাম! উদ্ভট উদ্ভট সব চিন্তাভাবনা। এই যেমন, আকাশের তারা খসে পড়া। রাতে একনাগাড়ে আকাশে তাকিয়ে থাকতাম তারাদের খসে পড়া দেখার জন্য আর ভাবতাম, ইশ, যদি একটা খসে পড়া তারা আমি পেয়ে যেতাম! যে তারাটা একটু আগেই খসে পড়লো, সেটা কোথাও না কোথাও পরেছে এবং কেউ সেটা পেয়েছে। খোঁজ পেলে তারাটা আমি কিনে আনতামই যত টাকা লাগুক। আরও ভাবতাম, আকাশের ওপাড়ে কি আছে? সেখানে কি কখনও যাওয়া যাবে না? আমরা যেমন বাড়ির ছাদে উঠি, তেমনি করে আকাশের ওপড়ে উঠতে পারলে না জানি কত ভালো লাগতো!

শুধু ছোটবেলা নয়, এই বড়বেলাতেও আমি আকাশ দেখতে এবং ভাবতে ভালোবাসি। তবে, এখন দৃষ্টিভঙ্গি আর ভাবনার ধরন বদলেছে। এখন আমি জানি, আকাশ আমার বাড়ির ছাদের মত কঠিন কোন বস্তু নয়, তাই আকাশের ছাদে উঠে দৌড়াদৌড়ি করার স্বপ্ন কোনদিনই পূরণ হবে না। খসে পড়া তারার প্রতি আর লোভ নেই। কেননা, সেগুলো আসলে প্রকৃত তারা নয়। প্রকৃত তারা পৃথিবীর উপর খসে পড়লে পৃথিবীর অস্তিত্বই থাকবে না। তাছাড়া, খসে পড়া তারাদের আনাগোনা আমাদের পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভেতর। আর প্রকৃত তারারা থাকে অনেক অনেক অনেক দূরে। এমনকি, আমাদের থেকে সবচেয়ে নিকটে যে তারাটা আছে, প্রক্সিমা সেন্টরী, সেটাও ৪ আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ, সেই তারাটা থেকে আলো আমাদের পৃথিবীতে আসতেও চার বছর লেগে যায়! আপনি আজকে রাতে প্রক্সিমা সেন্টরীকে যেমন দেখছেন, সেটা কিন্তু তারাটার চার বছর আগের অবস্থা। আজ তারাটা বিস্ফোরিত হয়ে গেলেও আমরা তা দেখবো চার বছর পর! এই তো গেলো সবচেয়ে নিকটবর্তীর তারার গল্প, দৃষ্টিসীমার অধিকাংশ তারকাই কয়েক শত থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। তবে, মহাবিশ্বের বেশিরভাগ তারকাই এতো দূরে অবস্থিত যে, তা আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে।

মহাবিশ্ব সম্পর্কে আরও বেশি বেশি তথ্য পেতে আমি সাহায্য নিলাম মহা বৈজ্ঞানিক গ্রন্থ, বিজ্ঞানীদের প্রধান তথ্যভান্ডার, সকল জ্ঞানের আঁধার, মহাগ্রন্থ আল কোরানের। কিন্তু কোরান ঘেটে আমি খুবই হতাশ হলাম। মহাবিশ্ব সম্পর্কে কোরান লেখকের কোন ধারনা আছে বলে মনে হলো না। ১৪০০ বছর আগের একজন আরব বেদুঈনের মহাবিশ্ব সম্পর্কে যতটুকু জানার কথা, ততটুকুই কোরানের দৌড়। ছোটবেলায় “আকাশ” নিয়ে আমি যা যা ভাবতাম, তার অনেক কিছুই কোরানের সাথে মিলে গেলো। বরং, ছোটবেলার সেই উদ্ভট ভাবনাগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছে মহাবৈজ্ঞানিক গ্রন্থ কোরান। যেমন, আমি জানতাম, আকাশের তারকা এমনিতেই খসে পড়ে। কোরান পড়ে জানলাম সেগুলো দিয়ে আল্লাহপাক শয়তানকে মিসাইল মারেন! ছোটবেলায় আমি কখনই আকাশ ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা করতাম না, কিন্তু কোরান পড়ে জানতে পারলাম, কাফের-মুরতাদরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের মাথায় আকাশ ভেঙ্গেও পড়তে পারে আল্লাপাকের ইচ্ছায়। আকাশ নামক ছাদের উপরে উঠার রাস্তা কোনটা, সেটা আমার একটা চিন্তার বিষয় ছিলো। কিন্তু আল্লাপাক এর সমাধানে জানালেন, আকাশের বেশ কিছু দরজা আছে যেগুলো খুলে দিলেই উপরে উঠা যাবে।

কোরআনে জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত এমন মারাত্মক সব তথ্যসমূহ নিয়েই আজকের আলোচনা। যারা নূন্যতম বিজ্ঞান বুঝেন, তারা কোরানের এইসব মহাউন্মাদীয় বিজ্ঞান দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে আমি নিশ্চিত। তবে, যারা বিজ্ঞান একদমই বুঝেন না, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার কথা শুনেই “আস্তাগফিরুল্লাহ রাব্বি মিন কুল্লি…” জপা শুরু করে দিয়েছেন, তাদের জন্যে প্রথমে আকাশ, মহাবিশ্ব ইত্যাদি সম্পর্কে একদম সহজ ভাষায় কিছুটা ধারনা দিতে চেষ্টা করবো, অতঃপর কোরানের এইসব বিনোদন নিয়ে হাজির হবো।

আকাশ কি? আকাশে কি কি আছে? মহাবিশ্ব কতটা বিশাল?

পৃথিবীতে অবস্থানকারী একজন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে, আমাদের মাথার উপর নীলাভ ছাদের মত বস্তুটাই আকাশ। পৃথিবীটা ঘরের মেঝে/ফ্লোর হলে, আকাশটা যেন তার ছাদ। আর এই ছাদস্বরুপ আকাশে সাজানো আছে চন্দ্র, সূর্য, তারা।

sky-in-desert
কোরান লিখিত হওয়ার সময়কালীন একজন বেদুঈনের দৃষ্টিতে “আকাশ”

প্রকৃতপক্ষে, আমরা এই যে নীল আকাশটা দেখি, সেটা আসলে একটা দৃষ্টিভ্রম। এটা পৃথিবীর উপরে শক্ত কঠিন কোন ছাদ নয়। শুধুই আলোর খেলা। সূর্যের সাদা আলো আসলে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রঙের আলোর মিশ্রন। সূর্যের আলো পৃথিবীতে প্রবেশের সময় বায়ুমন্ডলের ধূলিকণার সংস্পর্শে তা বিচ্ছুরিত হয়ে যায়। বেগুনী এবং নীল রঙের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম বলে এরা বেশি বিচ্ছুরিত হয়। তবে, আমাদের চোখ বেগুনী রঙের প্রতি খুব একটা সংবেদনশীল নয় বলে আমাদের কাছে নীল রঙটাই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। একারনেই আমরা আকাশ নীল দেখি। রাতে সূর্যের আলোর অনুপস্থিতির কারনে নীল আকাশ দেখি না। তখন আমাদের দৃষ্টি বায়ুমন্ডল ভেদ করে বহুদূর চলে যায়… তারাদের দেশ পর্যন্ত। চাঁদে বায়ুমন্ডল নেই বলে সেখানে দিন কিংবা রাত, সবসময়ই “আকাশ” কালো দেখায়। সুতরাং, আমাদের মাথার উপর আকাশ নামক কোন কঠিন নীল রঙের ছাদ নেই। নিচের চিত্রটি দেখুন। পৃথিবীর উপরিভাগে বায়ুমন্ডলের এই সরু নীলাভ লেয়ারটাই আমাদের কথিত “বিশাল নীল আকাশ”।

atmosphere
স্যাটেলাইট থেকে তোলা পৃথিবীর ছবিঃ পৃথিবী ও মহাশুন্যের মধ্যবর্তী এই বক্র, সরু নীলাভ লাইনটাই হচ্ছে আমাদের বায়ুমন্ডল যেটাকে আমরা “বিশাল নীল আকাশ” হিসেবে দেখি ভূপৃষ্ঠে দাঁড়িয়ে

এক কথায় যদি বলি, মহাবিশ্বটা আসলে “শূন্য”। মহাবিশ্বের প্রায় সবটাই শূন্যস্থান। এই শুন্যস্থানে ভাসমান কিছু জ্যোতিষ্ক রয়েছে। শুন্যস্থানের তুলনায় এই জ্যোতিষ্কসমূহের মিলিত পরিমাণ খুবই নগন্য। একটা জ্যোতিষ্ক থেকে আরেকটা জ্যোতিষ্ক খুব খুব দূরে অবস্থিত যা সাধারন মানুষের কল্পনারও বাইরে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী জ্যোতিষ্কটি হচ্ছে চাঁদ যার গড় দূরত্ব ৩৮৪৪০০ কিলোমিটার। নিচে কয়েকটি চিত্রের মাধ্যমে একটি স্কেল অনুসরন করে আমরা কিছু জ্যোতিষ্কের দূরত্ব দেখাবো। প্রথমেই পৃথিবী আর চাঁদের দূরত্ব দেখে নিই।

Earth-Moon
বামে পৃথিবী এবং ডানে চাঁদ; এদের আকার এবং দূরত্বের হিসেব করে স্কেল অনুযায়ী অঙ্কিত হয়েছে

এর তুলনায় সূর্যের অবস্থান বহু দূরে। তা প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরত্ব।

Sun-Earth-Moon-distance
বামে সূর্য এবং ডানে পৃথিবী-চন্দ্র সিস্টেমটি; এটিও স্কেল অনুযায়ী অঙ্কিত। চিত্রে, পৃথিবী এবং চন্দ্র বুঝাতে যে ছোট্ট বিন্দুটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ২ পিক্সেলের বেশি নয়।

সূর্যের পর আমাদের নিকটবর্তী নক্ষত্রটি হচ্ছে প্রক্সিমা সেন্টরী যার দূরত্ব প্রায় ৪০,৫১৯,৫৫৩,২০০,০০০ কিলোমিটার (৪০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার)। এটা এতই বিশাল দূরত্ব যে, উপরের স্কেল অনুসরন করে আমরা কোন চিত্রে সৌরজগৎ থেকে প্রক্সিমা সেন্টরীর দূরত্ব দেখাতে পারবো না। যদি দেখাতে চাই, তাহলে সেটাকে দেখাতে হবে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে। ২০ ইঞ্চি কম্পিউটার স্ক্রিনে ৫৪ কিলোমিটার প্রশস্ত ডায়াগ্রাম! সুবহানাল্লাহ!

আমরা খালি চোখে সর্বোচ্চ প্রায় ২৮০০০ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার দূরত্বের নক্ষত্রদের দেখতে পারি। আমাদের দৃষ্টিসীমার বাইরে আরও বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে যারা সবাই আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ে’র অংশ। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন। এটি আমাদের পাশ্বর্বতী এন্ড্রোমেডা গ্যালাক্সি। আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কি ওয়ে অনেকটা এরকমই দেখতে। আমরা খালি চোখে যত নক্ষত্র দেখতে পাই, নিচের চিত্রে তাদের অবস্থান হবে একটা ছোট বিন্দুর মত, ২ পিক্সেলের বেশি হবে না কখনই। এবার চিন্তা করুন একেকটি গ্যালাক্সি কত বিশাল!

galaxy-andromeda
এটি আমাদের প্রতিবেশি গ্যালাক্সি “এন্ড্রোমেডা”। আমরা যদি আমাদের গ্যালাক্সি “মিল্কি ওয়ে” কে দূর থেকে দেখতে পারতাম, তাহলে সেটিও খুব সম্ভবত এরকম দেখাতো।

উপরের চিত্রে একটামাত্র গ্যালাক্সি দেখা যাচ্ছে। নিচের চিত্রটি দেখুন, অনেকগুলো গ্যালাক্সি সম্বলিত একটা গ্যালাক্সিক ক্লাস্টার।

galactic-cluster
একটি গ্যালাক্টিক ক্লাস্টার। চিত্রের প্রতিটি আলোক বিন্দু একেকটি পূর্ণ গ্যালাক্সি।

এরকম বিলিয়ন বিলিয়ন গ্যালাক্সি নিয়ে আমাদের এই ইউনিভার্স গঠিত।

কোরান লেখকের জ্ঞানের দৈন্যদশা

এই যে আমাদের এই বিশাল মহাবিশ্ব, এর কতটুকু আছে কোরানে? পৃথিবীর একজন মূর্খ ব্যাক্তির দৃষ্টিতে যতটুকু দেখা সম্ভব, যা চিন্তা করা সম্ভব, কোরানে কেবল ততটুকুই আছে। কোরানে এই মহাবিশ্ব নিয়ে অনেক ঝাড়িঝুড়ি দেয়া হয়েছে। আল্লাহ এই করেছেন, ওই করেছে। এইটা আল্লাহর কথা ছাড়া নড়ে না, ঔটা আল্লাহকে সিজদা করে… ব্লা ব্লা… তবে, কোরানের সব ঝাড়িঝুড়ি কেবলমাত্র ৩ টা জিনিসের মধ্যেই সীমাবন্ধ।

১। চন্দ্র
২। সূর্য
৩। তারা

এর বাইরে একটা লাইনও নেই কোরানে। কোরান লেখকের মহাবিশ্ব সম্পর্কে জ্ঞানের এই দৈন্যদশা কেন?

এমনকি, পুরো কোরান ঘেটে আপনি গ্রহ সম্পর্কিত কোন কথা পাবেন না। অথচ, মহাবিশ্বে কত বিলিয়ন বিলিয়ন গ্রহ আছে। আমাদের সৌরজগতের মধ্যেই পৃথিবী থেকে বহুগুন বৃহৎ গ্রহ রয়েছে। নিচের চিত্রটি দেখলে কিছুটা ধারনা পাবেন সেইসব গ্রহগুলোর বিশালত্ব নিয়ে। চিত্রটি গ্রহগুলোর সাইজ এর স্কেল অনুযায়ী অঙ্কিত।

Planets_size_comparison
একদম পেছনের বাম থেকে ডানে, বড় দুটো হচ্ছে যথাক্রমে বৃহস্পতি ও শনি। এরপরের নীল দুটো বাম থেকে ডানে যথাক্রমে ইউরেনাস ও নেপচুন। সামনে যে চারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গ্রহ, তাদের ১ম সারির বামে পৃথিবী, ডানে শুক্র; ২য় সারির বামে মঙ্গল এবং ডানে বুধ গ্রহ। (Source: “Size planets comparison” by Lsmpascal – Own work. Licensed under CC BY-SA 3.0 via Commons.)

কোরানে কেন নেই গ্রহ সম্পর্কিত কোন তথ্য? একটু চিন্তা করলেই কারনটা উদঘাটন করা সম্ভব। আকাশে তাকিয়ে আপনি কোন গ্রহের অস্তিত্ব বুঝতে পারবেন না। আমরা রাতের বেলা খালি চোখে কয়েকটি গ্রহ দেখতে পাই ঠিকই, তবে সেগুলোকে তারার মতই লাগে দেখতে। কোনটা গ্রহ, আর কোনটা নক্ষত্র (তারকা) সেটা আপনি আলাদা করতে পারবেন না। আরব বেদুইনরাও তাই গ্রহের অস্তিত্ব টের পায় নি। আকাশে জ্বলতে থাকা সবগুলো প্রদীপকেই তারকা(নক্ষত্র) ভাবতো। কোরান লেখকও এর বাইরে যেতে পারেন নি। নিচের চিত্রটি দেখুন। মাঝখানে ত্রিভুজ এর মত আকৃতিতে তিনটা “তারকা” আছে, তাই তো? এই তিনটাই কিন্তু তারকা নয়। এদের মধ্যে দুইটা হচ্ছে গ্রহ, বাকি একটা তারকা/নক্ষত্র। খালি চোখে দেখে কি এদের আলাদা করা সম্ভব??

Saturn_Spica_Mars
মাঝখানে ত্রিভুজ আকৃতিতে যে তিনটা বিন্দু রয়েছে, তাদের মধ্যে একদম উপরেরটা হচ্ছে শনি গ্রহ, ডান কর্ণারেরটা হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ এবং নিচেরটি হচ্ছে একটি তারকা যার নাম Spica। খালি চোখে তারকা এবং গ্রহের পার্থক্য বুঝা প্রায় অসম্ভব। [photo by Mike Weasner, taken on Aug. 10, 2012, at ~19:00 MST]
এবার নিশ্চয়ই আপনাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে, কোরানে কেন গ্রহের কথা উল্লেখ নেই?

এছাড়াও, আপনি পুরো কোরআন ঘেটে কোথাও পাবেন না পৃথিবী গোলাকার। পাবেন না পৃথিবীর ঘূর্ণনের কথা। কেননা, এসব তথ্য কোন মূর্খ আরব রাখালের জানার কথা ছিলো না।

আরব বেদুইনদের চোখে “আকাশ”

তৎকালীন আরব বেদুইনরা আকাশ সম্পর্কে নানা রকম উদ্ভট ধারনা পোষন করতেন। তারা ভাবতেন আকাশ কোন কঠিন বস্তু যা আমাদের মাথার উপর ছাদের মত স্থাপন করা আছে। পৃথিবীটা (মোল্লাদের ভাষায় “জমিন”) কোন ঘরের মেঝে/ফ্লোর হলে তার ছাদ হলো আকাশ। এইসব প্রচলিত ধারনার সাথে অতিরিক্ত কিছু চাপাবাজি যুক্ত করে নবী মুহাম্মদ আকাশ নিয়ে দারুন কিছু হাস্যরসের যোগান দিলেন। চলুন আমরা কিছু মজাদার আয়াত সম্পর্কে জেনে নিই।

আকাশ আমাদের ছাদস্বরুপ।

Quran 21:32

আমি আকাশকে সুরক্ষিত ছাদ করেছি; অথচ তারা আমার আকাশস্থ নিদর্শনাবলী থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।

ব্যাবিলনীয় সভ্যতার লোকেরা বিশ্বাস করতেন যে, আকাশের সংখ্যা সাতটি, জমিনের সংখ্যা সাতটি। এগুলো একটার পর আরেকটা দূরত্ব বজায় রেখে স্তরে স্তরে সাজানো। পরবর্তীতে এই সাত আকাশের ধারনা ইহুদিধর্ম, খ্রিস্টধর্মেও প্রবেশ করে। সর্বশেষে আমাদের দিলের নবী কোরানে সেটা কপি পেস্ট মারেন।

Quran 65:12

আল্লাহ সপ্তাকাশ সৃষ্টি করেছেন এবং পৃথিবীও সেই পরিমাণে, এসবের মধ্যে তাঁর আদেশ অবতীর্ণ হয়, যাতে তোমরা জানতে পার যে, আল্লাহ সর্বশক্তিমান এবং সবকিছু তাঁর গোচরীভূত।

এবং হ্যাঁ, সেই স্তরে স্তরে সাজানো আকাশগুলোর কোনটাতেই কিন্তু ফাটল নাই। ভবিষ্যতেও ফাটল ধরবে না ইনশাল্লাহ, খুব ভালো মানের সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে আকাশগুলো বানাতে।

Quran 67:3

তিনি সপ্ত আকাশ স্তরে স্তরে সৃষ্টি করেছেন। তুমি করুণাময় আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টিতে কোন তফাত দেখতে পাবে না। আবার দৃষ্টিফেরাও; কোন ফাটল দেখতে পাও কি?

আকাশে ফাটল নাই বুঝলাম। তবে কোন ছিদ্র কি আছে? ফুটো থাকলে উঁকি মেরে দেখতে পারতাম ওপাড়ে কি আছে।

Quran 50:6

তারা কি তাদের উপরস্থিত আকাশের পানে দৃষ্টিপাত করে না আমি কিভাবে তা নির্মাণ করেছি এবং সুশোভিত করেছি? তাতে কোন ছিদ্রও নেই।

আফসোস। আল্লাপাক আকাশে একটা ছিদ্রও রাখেন নাই। ছিদ্র নাই, ফাটল নাই, এমন নিরেট আকাশের ওপাড়ে যাওয়ার স্বপ্ন কি কোন দিনই পূরন হবে না? কি করে যাবো আকাশের ওপাড়ে? সিড়ি টিড়ি আছে তো?

Quran 6:35

আর যদি তাদের বিমুখতা আপনার পক্ষে কষ্টকর হয়, তবে আপনি যদি ভূতলে কোন সুড়ঙ্গ অথবা আকাশে কোন সিড়ি অনুসন্ধান করতে সমর্থ হন…

জানা গেলো যে, আকাশে ওঠার সিড়ি আছে। তবে সেটা কষ্ট করে খুঁজে নিতে হবে। আমি না হয় সিড়ি খুঁজে নিয়ে সেটা বেয়ে আকাশ পর্যন্ত পৌছলাম। এরপর? নিশ্ছিদ্র আকাশের ওপাড়ে কি করে যাবো? দরজা আছে তো?

Quran 15:14

যদি আমি ওদের সামনে আকাশের কোন দরজাও খুলে দেই আর তাতে ওরা দিনভর আরোহণ ও করতে থাকে।

Quran 54:11

তখন আমি আকাশের দরজাগুলো খুলে দিয়ে মুষলধারায় বৃষ্টি বর্ষিয়েছিলাম।

আলহামদুলিল্লাহ। আকাশে ওঠার দরজাও আছে। সেই দরজা খুলে আল্লাহ সেখান দিয়ে বৃষ্টির পানি পৃথিবীতে ঢালেন।

আচ্ছা, আকাশের কি কোন পিলার/খুটি/স্তম্ভ আছে?

Quran 13:2

আল্লাহ, যিনি উর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত

সুবহানাল্লাহ! আকাশটা উপরে ভেসে আছে কোন পিলার ছাড়াই! কিন্তু সেটা কি করে সম্ভব? পিলার ছাড়া ছাদ উপরে ভেসে থাকবে কি করে? আকাশ তো মাটিতে পতিত হওয়ার কথা!

Quran 22:65

… তিনি আকাশ স্থির রাখেন, যাতে তাঁর আদেশ ব্যতীত ভূপৃষ্টে পতিত না হয়। নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি করুণাশীল, দয়াবান।

আল্লাহ কত মেহেরবান! আকাশ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন যেন সেটা বান্দার মাথার উপর না পরে।

তবে, মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার হাত থেকে মুসলিম উম্মাহ নিরাপদ হলেও কাফের-মুরতাদরা নিরাপদ নয়। তাদের মাথায় আল্লাহপাক আকাশের খন্ড ফেলবেন যেকোন দিন, যখন তার ইচ্ছে হবে।

Quran 34:9

তারা কি তাদের সামনের ও পশ্চাতের আকাশ ও পৃথিবীর প্রতিলক্ষ্য করে না? আমি ইচ্ছা করলে তাদের সহ ভূমি ধসিয়ে দেব অথবা আকাশের কোন খন্ড তাদের উপর পতিত করব।…

অতএব, কাফের মুরতাদরা সব সাবধান! কিয়ামত অতি নিকটবর্তী। আচ্ছা, কিয়ামতের সময় আকাশের অবস্থা কি হবে? আকাশ কি তখনও এমন নিশ্ছিদ্র, ফাটলহীন, পিলার ছাড়া দাঁড়িয়ে থাকবে?

Quran 77:9

যখন আকাশ ছিদ্রযুক্ত হবে,

Quran 69:16

সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও বিক্ষিপ্ত হবে।

আহারে, আকাশ নাকি ফুটা হয়ে যাবে… গুড়াগুড়া হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাবে… আর কি কি হবে?

Quran 21:104

সেদিন আমি আকাশকে গুটিয়ে নেব, যেমন গুটানো হয় লিখিত কাগজপত্র। যেভাবে আমি প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব…

কাগজ যেভাবে গুটানো হয়, সেভাবে করে আল্লাপাক কঠিন, নিরেট, সমতল আকাশটাকে গুটিয়ে নিবেন! ইয়া মাবুদ, সেই কঠিন দিনে আমাদের দিকে একটু সুনজর দিও। এই গুনাহগার আক্কাস আলীকে তোমার বন্দু, দিলের নবী মোস্তফার পাশে স্থান দিও।

আকাশের তারা দিয়ে শয়তানকে মিসাইল মারা

আমরা প্রায়ই রাতের আকাশে তারা খসে পড়তে দেখি। ব্যাপারটা আসলে কি? সত্যিই কি আকাশের তারা খসে পড়ে? উত্তর হচ্ছে, না, আকাশের তারা খসে পড়ে না। মহাশুন্যে অসংখ্য উল্কা সর্বদা ঘুরে বেড়ায়। এরা যখন পৃথিবীর আকর্ষনে প্রচন্ড গতিতে বায়ুমন্ডলের সংস্পর্শে আসে, তখন ঘর্ষনজনিত কারনে জ্বলে ওঠে। আর এ দৃশ্যই রাতের বেলা আমাদের চোখে ধরা দেয় “তারা খসা” হিসেবে। দেখলে সত্যিই মনে হবে কোন একটা তারা বুঝি খসে পড়েছে।

shooting-star
সাদা রেখাটি হচ্ছে উল্কাপাতের দৃশ্য যা মাত্র কয়েকশত কিলোমিটার উপরে বায়ুমন্ডলের ভেতরেই। এ দৃশ্য সর্বোচ্চ কয়েক সেকেন্ড পর্যন্ত স্থায়ী হয়। অপরপক্ষে, চিত্রে পেছনের সাদা বিন্দুগুলো হচ্ছে একেকটি তারকা যারা লক্ষ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং স্থায়ী।

অপরপক্ষে, আকাশের তারাগুলো রয়েছে লক্ষ কোটি কিলোমিটার দূরত্বে। আপনারা প্রাথমিক আলোচনা থেকে জেনেছেন যে, সবচেয়ে নিকটবর্তী তারাটিও ৪০,৫১৯,৫৫৩,২০০,০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। আর, উল্কাপাতের এই ঘটনা ঘটে ভূপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েকশত কিলোমিটার উপরে। বিস্তারিত নিজে থেকে জেনে নিতে পারেন গুগল করে যার সার্চ টার্ম হতে পারে “star vs shooting star

যাহোক, আমাদের দিলের নবী মোস্তফা আকাশের তারা আর উল্কাপাতের পার্থক্য ধরতে পারেন নি। কেননা, পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখে অত কিছু বুঝা সম্ভবও নয়। এজন্যেই তিনি কোরানে উল্লেখ করলেন যে, আকাশের তারা দিয়েই নাকি আল্লাপাক শয়তানকে মিসাইল মারেন!

Quran 67:5

আমি সর্বনিম্ন আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুসজ্জিত করেছি; সেগুলোকে শয়তানদের জন্যে ক্ষেপণাস্ত্রবৎ করেছি এবং প্রস্তুত করে রেখেছি তাদের জন্যে জলন্ত অগ্নির শাস্তি।

নক্ষত্রের মত এতো বড় অগ্নিকুন্ড একটা পুচকে শয়তানের উপর ছুঁড়ে মারলে তার কি অবস্থা হবে ভাবতে পারেন?? 😀

সূর্যের উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান

সূর্যের উদয় হওয়া ও অস্ত যাওয়ার কি নির্দিষ্ট কোন স্থান রয়েছে?

হ্যাঁ রয়েছে! চলুন, কোরানে এ সম্পর্কিত আয়াতগুলো দেখে নিই।

Quran 18:86

অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।

Quran 18:90

অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন, তখন তিনি তাকে এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদয় হতে দেখলেন, যাদের জন্যে সূর্যতাপ থেকে আত্নরক্ষার কোন আড়াল আমি সৃষ্টি করিনি।

আয়াতগুলো লক্ষ্য করুন, স্পষ্টকরেই বলা হয়েছে, সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। এক্ষেত্রে, অনেকেই এই বলে ত্যানাবাজি করেন যে, এখানে উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থানের কথা বলা হয় নি, যুলকারনাইনের কাছে ওরকম মনে হয়েছে। না ভাই, আয়াতগুলো আরও দুইবার করে চারবার পড়ুন।
অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন;” “অবশেষে তিনি যখন সূর্যের উদয়াচলে পৌছলেন,” এই দুটো উক্তি তো সরাসরি কোরান লেখকের। কোরান লেখক এখানে নিজের ভাষাতেই সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থানের কথা বললেন। তাই নয় কি? তাছাড়া, যুলকারনাইন সূর্যের অস্তাচলে পৌছে সেখানে একটা সম্প্রদায়কে দেখেছিলেন। আবার, সূর্যের উদয়াচলে পৌছে আরেক সম্প্রদায়কে দেখেছিলেন যাদের মাথার ঠিক উপর দিয়েই সূর্যটা ওঠে, সূর্যতাপে তাদের চান্দি গরম হয়ে যায় কেননা আল্লাপাক সূর্যতাপ থেকে আত্মরক্ষার কোন আড়াল সৃষ্টি করেন নি। এতএব, সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার নির্দিষ্ট স্থান একেকটি ফিজিক্যাল লোকেশনকেই নির্দেশ করে এবং এটা কোন রুপক কথাবার্তা নয়।

তৎকালীন আরব বেদুইনদের এরকমই ধারনা ছিলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের স্থান নিয়ে। এরই প্রতিফলন ঘটেছে কোরানে।

অজ্ঞানতার নিদর্শন এখানেই শেষ নয়। আমাদের মহাজ্ঞানী হুজুরে পাক ভাবতেন, সূর্য কোন উষ্ণ ঝরণার পানিতে অস্ত যায়। অতঃপর রাতের বেলা সে আল্লাপাকের আরশের নিচে গিয়ে সিজদায় পড়ে থাকে এবং প্রার্থনা করতে থাকে পরের দিন সকালে উদিত হওয়ার জন্যে। আল্লাপাক অনুমতি দিলেই সূর্যটা পরের দিন সকালে উদিত হয়। চলুন এ সম্পর্কিত হাদিসগুলো দেখে নিই।

Abu Dawud, Book 31, Hadith 3991

Narrated Abu Dharr:
I was sitting behind the Messenger of Allah (ﷺ) who was riding a donkey while the sun was setting. He asked: Do you know where this sets ? I replied: Allah and his Apostle know best. He said: It sets in a spring of warm water (Hamiyah).

Bukhari, Vol. 4, Book 54, Hadith 421 | বাংলা ভার্শন

আবূ যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য অস্ত যাবার সময় আবূ যার (রাঃ)-কে বললেন, তুমি কি জান, সূর্য কোথায় যায়? আমি বললাম, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, তা যেতে যেতে আরশের নীচে গিয়ে সাজ্দাহয় পড়ে যায়। অতঃপর সে আবার উদিত হবার অনুমতি চায় এবং তাকে অনুমতি দেয়া হয়। আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়— এটাই মর্ম হল মহান আল্লাহর বাণীরঃ ‘‘আর সূর্য নিজ গন্তব্যে (অথবা) কক্ষ পথে চলতে থাকে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ।’’ (ইয়াসীন ৩৮) (৪৮০২, ৪৮০৩, ৭৪২৪, ৭৪৩৩) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৯৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৬৯)

মুহাম্মদের সময়কালে এটা জানার কথা না যে, সূর্য ডুবে কোথাও যায় না। সূর্যের ঘোরার কারনে নয়, বরং পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের জন্যেই দিনরাত্রি সংঘঠিত হয়। বাংলাদেশে যখন রাত নামে, তখন সূর্য গিয়ে আরশের চিপায় সিজদায় পড়ে থাকে না পরের দিন উদিত হওয়ার অনুমতির জন্যে, বরং সেই সময়টাতে সূর্য আলোকিত করে ইহুদি নাসারাদের দেশ ইউরোপ এমেরিকাকে। সূর্য ২৪ ঘন্টাই দৃশ্যমান পৃথিবীর যেকোন অর্ধেকটা জুড়ে। তাই সেটা কখনই আল্লাপাককে সিজদার সময় পায় না।

হাদিসটির এই অংশটি খুব হাসির উদ্রেক করে,
আর শীঘ্রই এমন সময় আসবে যে, সিজ্দা করবে কিন্তু তা কবূল করা হবে না এবং সে অনুমতি চাইবে কিন্তু তাকে অনুমতি দেয়া হবে না। তাকে বলা হবে, যে পথ দিয়ে আসলে ঐ পথেই ফিরে যাও। তখন সে পশ্চিম দিক হতে উদিত হয়
কিয়ামতের আগে সূর্যকে বলা হবে যেখান দিয়ে এসেছো, সেখান দিয়েই ফিরে যাও। তখন সে পূর্ব দিকের বদলে পশ্চিম দিক দিয়েই উদিত হবে। মুহাম্মদ যে ভাবতেন, সূর্যের দৌড়াদৌড়ির কারনেই দিনরাত্রি হয়, এর থেকে আর বড় প্রমাণ কি দরকার আছে? যাহোক, তারপরও  এরকম ক্রিয়েটিভ চাপাবাজির জন্যে নবিজীকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারছি না।

এর থেকেও বড় মজার ব্যাপার হচ্ছে এই যে, যখনই কোন মডারেট ত্যানাবাজ মুমিনকে এই হাদিসখানা শোনাবেন, সে মুখখানা মলিন করে নিচু স্বরে বলবে, “এটা রুপক”। 😀

চাঁদ ও সূর্যের দূরত্ব, গতিপথ সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব

বিজ্ঞান না জানা একজন সাধারন মানুষের পক্ষে মনে হতেই পারে যে, চাঁদ আর সূর্য একই দূরত্বে আছে, এদের গতিপথ একই কিংবা কাছাকাছি। এরা যেকোন সময় সংঘর্ষও বাধিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ১৪০০ বছর পূর্বে পৃথিবীতে অবস্থানকারী একজন আরব বেদুঈনের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে এমনটা মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক। কোরানে এর প্রতিফলনও দেখতে পাই আমরা।

Quran 36:40

সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।

আয়াতটি লক্ষ্য করুন। সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের! এর মানে কি ভাই? চন্দ্র আর সূর্যের কক্ষপথ কি নিকটবর্তী যে একটা আরেকটাকে ধরে ফেলার সম্ভাবনা আছে? নাকি এদের কক্ষপথ কোথাও পরস্পরকে ওভারলেপ করেছে? এরা কি একই দূরত্বে অবস্থান করে? নিচের চিত্রটি খেয়াল করুন বন্ধুরা।

Sun-Moon
নীল বৃত্তটি হচ্ছে পৃথিবীর কক্ষপথ। গ্রে কালারটি চাঁদের কক্ষপথ। মাঝখানের লাল বৃত্তটি সূর্য।

চন্দ্র আমাদের পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে খুব নিকটকেই। অপরপক্ষে আমাদের এই পৃথিবী-চন্দ্র সিস্টেমটি ঘুরছে অনেক অনেক দূরে অবস্থিত সূর্যকে কেন্দ্র করে। ডায়াগ্রামে দেখুন, সূর্য চন্দ্রের নাগাল পেতে যাবে কোন দুঃখে? নূন্যতম বিজ্ঞান জানা কোন লোকের পক্ষে এমন আহাম্মকি কথাবার্তা বলা সম্ভব নয়। এই কথা সেই মূর্খ ব্যাক্তিই বলবে, যে মনে করে, সূর্য আর চন্দ্রকে তো প্রতিদিন একই পথে যাতায়াত করতে দেখি, তবুও একটা আরেকটাকে ধরতে পারে না।

হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, একবার সূর্যগ্রহনের সময় ভয় পেয়ে নবী মুহাম্মদ ভোঁ দৌড় লাগায় মসজিদের দিকে এবং নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে যায়। কিছুক্ষন পর সব ঠিকঠাক হতে দেখেই তার ধারনা হয়ে থাকতে পারে যে, সূর্য চন্দ্রের নাগাল পেতে চায় কিন্তু পারে না। চলুন হাদিসটা দেখে নিই।

Bukhari, Vol. 2, Book 18, Hadith 167বাংলা ভার্শন

আবূ মূসা (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার সূর্যগ্রহণ হল, তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভীত অবস্থায় উঠলেন এবং ক্বিয়ামাত সংঘটিত হবার ভয় করছিলেন। অতঃপর তিনি মসজিদে আসেন এবং এর পূর্বে আমি তাঁকে যেমন করতে দেখেছি, তার চেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কিয়াম, রুকূ‘ ও সাজদাহ্ সহকারে সালাত আদায় করলেন। আর তিনি বললেনঃ এগুলো হল নিদর্শন যা আল্লাহ্ পাঠিয়ে থাকেন, তা কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। বরং আল্লাহ্ তা‘আলা এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের সতর্ক করেন। কাজেই যখন তোমরা এর কিছু দেখতে পাবে, তখন ভীত অবস্থায় আল্লাহর যিকর, দু‘আ এবং ইস্তিগ্ফারের দিকে ধাবিত হবে। (মুসলিম ১০/৫, হাঃ ৯১২) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৯৯৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১০০০)

muhammad-scared-of-sun-eclipse

যাহোক, আমরা যদি উপরোক্ত 36:40 আয়াতটির “রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের” এই অংশটির দিকে নজর দিই, তাহলে বলতে হয় এটাও একটা ভুল। মুহাম্মদের আরবে রাত্রি ঠিকই দিনের অগ্রে চলে না, তবে পৃথিবীর উত্তরে যেতে থাকলে, উত্তর মেরুর কাছাকাছি বহু স্থানে রাত্রি দিনের অগ্রে চলে। রাত্রি ধীরে ধীরে বড় হয় এবং দিন সংকুচিত হতে থাকে। একটা সময় ২৪ ঘন্টাই রাত্রি থাকে এবং দিন উধাও হয়ে যায়। যারা কানাডা, গ্রীণল্যান্ড কিংবা নরওয়ের মত দেশে থাকে, তাদের কাছ থেকে জেনে নিয়েন। কিংবা গুগলে “polar night” লিখে সার্চ দিয়ে বিস্তারিত জেনে নিয়েন। সুতরাং, রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের, এটা ভূগোল না জানা এক মূর্খের প্রলাপ ব্যাতিত আর কিছুই নয়।

চাঁদের নিজস্ব আলো

দুর্ভাগ্যবশত, কোরান লেখকের এটা জানা ছিলো না যে, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই। সে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে মাত্র। দেখে নিই কোরানে এ সম্পর্কে কি বলা হয়েছে।

Quran 71:16

এবং সেখানে চন্দ্রকে রেখেছেন আলোরূপে [নূর] এবং সূর্যকে রেখেছেন প্রদীপরূপে।

উল্লেখ্য, এই আয়াত নিয়ে মুমিনদের ত্যানাবাজির কোন শেষ নেই। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, এই আয়াতে সূর্যের আলো বুঝাতে আরবি শব্দ “সিরাজ” এবং চাঁদের আলোর জন্যে “নূর” শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেহেতু ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে, তাই “নূর” দিয়ে “প্রতিফলিত আলো” বুঝানো হয়েছে। এমনকি, এই আয়াতের অনুবাদ করতে গিয়ে Sahih International ব্রাকেটের ভেতর [reflected] কথাও জুড়ে দিয়েছে! তবে, Muslim Khan, Pickthall, Yusuf Ali, Shakir, Dr. Ghali সহ অন্যান্যরা এই চাটুকারিতা করেন নি।

প্রতিফলন/reflection এর জন্য একটি সুস্পষ্ট আরবি শব্দ রয়েছে, انعكاس (in`ikaas) ।

কিন্তু কোরানে চাঁদের আলো বুঝাতে কোথাও এই শব্দখানা ব্যবহার করা হয়নি। হয় “নূর” কিংবা “মুনীর” ব্যবহার করা হয়েছে। তারপরও, শব্দটা নূর হোক কিংবা মুনীর, মুমিনরা সেটার অনুবাদ করবে প্রতিফলিত আলো।

এইসব চাটুকার মুমিনদের মুখ চুপসে যায় নিচের আয়াতখানা তুলে ধরলে। দেখুন ভালো করে।

Quran 24:35

আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের জ্যোতি [নূর], তাঁর জ্যোতির [নূর] উদাহরণ যেন একটি কুলঙ্গি, যাতে আছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি একটি কাঁচপাত্রে স্থাপিত, কাঁচপাত্রটি উজ্জ্বল নক্ষত্র সদৃশ্য। তাতে পুতঃপবিত্র যয়তুন বৃক্ষের তৈল প্রজ্বলিত হয়, যা পূর্বমুখী নয় এবং পশ্চিমমুখীও নয়। অগ্নি স্পর্শ না করলেও তার তৈল যেন আলোকিত হওয়ার নিকটবর্তী। জ্যোতির [নূর] উপর জ্যোতি [নূর]। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পথ দেখান তাঁর জ্যোতির [নূর] দিকে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন এবং আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।

এই আয়াতে আল্লাহর নিজের জ্যোতি বা নিজের আলো বুঝাতে “নূর” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু, এই আয়াতের অনুবাদে কোন মুমিন “নূর” এর অনুবাদ “প্রতিফলিত আলো” করে না। আমাদের Sahih International ও ব্রাকেটের ভেতর reflected শব্দটা জুড়ে দেয় নি। দিবেই বা কোন সাহসে, আল্লাপাকের আলোকে প্রতিফলিত আলো বললে তো জাহান্নাম অবধারিত! এটাই হচ্ছে নিজেদের সুবিধামত অনুবাদ বিকৃতির মাধ্যমে কোরানকে বিজ্ঞানময় করে তোলার ব্যার্থ চেষ্টা।

চাঁদের আলো সম্পর্কিত আমরা আরও একটা আয়াত দেখে নিই।

Quran 75:8

চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে।

কেয়ামত নিয়ে ভয়ভীতি দেখানোর এক পর্যায়ে আল্লাপাক এই আয়াতে এসে বললেন যে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে। জ্যোতি না থাকলে সেটা জ্যোতিহীন হয় কি করে? কোরান লেখক যদি সত্যিই জানতেন যে, চন্দ্রের নিজস্ব আলো নেই, তাহলে এমন কথা বলতেন না।

তাছাড়া, কোরান লেখক যদি একটু খোলাসা করে বলে দিতেন, “তোমরা কি লক্ষ্য করো না, আমি কিভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করাই? তারপরও কি তোমরা ঈমান আনবে না?”, তাহলেই তো মুমিনদের অত কষ্ট করে আয়াতের অর্থ টুইস্ট করে তা বিজ্ঞানময় করতে হতো না।

যাহোক, সবশেষে একটা অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে রাখি। সেটা হচ্ছে, মুহাম্মদের জন্মেরও হাজার বছর পূর্বে সর্বপ্রথম এনাক্সাগোরাস বলেছিলেন, চাঁদের নিজস্ব আলো নেই, সে সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে মাত্র।

আল্লাপাকের সুপারিশকৃত, ধ্বজভঙ্গ হিজরী ক্যালেন্ডার

২০৫০ সালের ক্রিসমাস উৎসব কবে হবে? খ্রিস্টানরা সেটা ঠিকই বলে দিতে পারবে। কিন্তু মুসলিমরা আগামী বছরের ঈদুল ফিতরের তারিখটাও বলতে পারবে না। কেন এমনটা হয় বলতে পারবেন?

কারনটা হচ্ছে, ক্রিসমাস উৎসব হয় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যা একটি সৌর পঞ্জিকা বা Solar Calendar । অপরপক্ষে, মুসলিমদের উৎসব পালিত হয় হিজরি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যা একটি পর্যবেক্ষন নির্ভর চন্দ্র পঞ্জিকা বা  Observational Lunar Calendar । সোলার ক্যালেন্ডারের সবকিছু পূর্বেই বলা দেয়া সম্ভব হলেও পর্যবেক্ষন নির্ভর  লুনার ক্যালেন্ডারে ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব নয় কেননা, এটা এস্ট্রোনমিক্যাল হিসেব অনুসরন করে পরিচালিত হয় না, বরং স্বচক্ষে চাঁদ দেখা না দেখার উপর নির্ভর করে পরিচালিত হয়। নতুন চাঁদ দেখা না গেলে লুনার ক্যালেন্ডারের নতুন মাস শুরু হতে পারে না। বৈরি আবহাওয়ার কারনে চাঁদ দেখা না গেলে নতুন মাস শুরু হতে বিলম্ব হয়ে যায়। এজন্যে অঞ্চলভেদে নতুন চন্দ্রমাস শুরু হতে তারতম্য পরিলক্ষিত হয়। চন্দ্রমাস ২৯ দিনে হবে নাকি ৩০ দিনে হবে সেটা আগে থেকেও বলে দেয়া সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের চাঁদ দেখা কমিটিকে এজন্যেই মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে লালন পালন করছি আমরা।

আলোচনার শুরুতেই দেখে নিই কেন মুসলিমরা চন্দ্র পঞ্জিকা / লুনার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। কি বলা আছে কোরানে।

Quran 10:5

তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সুর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনযিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব।…

Quran 2:189

তোমার নিকট তারা জিজ্ঞেস করে নতুন চাঁদের বিষয়ে। বলে দাও যে এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ এবং হজ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম…

দেখা যাচ্ছে যে, আল্লাপাক মুসলিমদের হাত পা বেধে দিয়েছেন লুনার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করার জন্যে। এবং এটিকে মানুষের জন্যে দিন তারিখ হিসাব রাখার মাধ্যম করেছেন।

মুসলিমরা তাদের উৎসব পালনের হিসেব রাখা ব্যাতিত এই লুনার ক্যালেন্ডার আজ কেউ অনুসরন করে না। সারা বিশ্ব চলে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার তথা সোলার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু কেন বিশ্বের সব মানুষ আল্লাপাকের নির্ধারন করা চন্দ্র পঞ্জিকাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিলো? কারনটা কি? চলুন একটু জেনে নিই।

পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে, এর উপর ভিত্তি করে সোলার ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে। অপরপক্ষে, লুনার ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়েছে চাঁদ কর্তৃক পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আবর্তনের উপর ভিত্তি করে।

সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর আবর্তনের উপর ঋতু পরিবর্তন নির্ভর করে। সুতরাং, ঋতু পরিবর্তন সোলার ক্যালেন্ডার এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হয়। আর, বলাই বাহুল্য যে ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখা কত গুরুত্বপূর্ন। সময়মত ফসল লাগানো, ফুল ফল এর উৎপাদন, গাছপালা পশুপাখির প্রজনন, আবহাওয়ার, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছুই ঋতু পরিবর্তনের উপর নির্ভরশীল। সুতরাং, এসব কাজে সোলার ক্যালেন্ডারই ভরসা।

কিন্তু লুনার ক্যালেন্ডার দিয়ে ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখা যায় না কেন?

চাঁদ একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিন করে প্রায় ২৯.৫ দিনে যাকে বলা হয় এক চন্দ্রমাস। সুতরাং, এক চন্দ্রবছর হয় প্রায় ২৫৪ দিনে। যা এক সৌরবছরের তুলনায় ১১ দিন কম। এভাবে, প্রতি সৌরবছর সময়ে লুনার ক্যালেন্ডারের সাথে সোলার ক্যালেন্ডার পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে ১১ দিন করে। যা তিন সৌরবছরে প্রায় ১ মাস পার্থক্য।

ঋতু পরিবর্তন যেহেতু সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীর ঘূর্ণন এর উপর নির্ভর করে এবং এটার সাথে লুনার ক্যালেন্ডার কোন সম্পর্কই নেই, তাই লুনার ক্যালেন্ডার দিয়ে আপনি ঋতু পরিবর্তনের হিসেব রাখতে পারবেন না। উদাহরনস্বরুপ, কোন কৃষক যদি ১৪৩১ হিজরি সালের ৬ রমজান কোন একটা ফসলের চারা রোপন করে, তাহলে তিন বছর পর ঋতুর একই সময়ে উক্ত ফসলের চারা রোপন করতে হলে সেটা করতে হবে ১৪৩৪ হিজরি সালের ৯ সাওয়াল। অর্থাৎ, রমজান মাসের পরের মাস সাওয়ালে। কিন্তু, উক্ত কৃষক যদি গ্রেগরিয়ান সোলার ক্যালেন্ডার অনুসরন করে, তাহলে তারিখটা হবে যথাক্রমে ১৫ আগস্ট, ২০১০ এবং ১৫ আগস্ট ২০১৩। অর্থাৎ, সোলার ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রে মাস চেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে না। এভাবেই, সোলার ক্যালেন্ডার দিয়ে ঋতু এবং কৃষিকাজের হিসেব করা যায়।

লিপ ইয়ার কি তা সবাই জানেন। প্রতি চতুর্থ বছরে ফ্রেব্রুয়ারীতে অতিরিক্ত ১ দিন যোগ করে সামঞ্জস্য বিধান করি। লিপ ইয়ার হয় ৩৬৬ দিনে। ঠিক একই সিস্টেম ফলো করে প্রতি ৩ বছরে আমরা যদি হিজরি ক্যালেন্ডারে ১ মাস করে যোগ করতে পারতাম, তাহলে উপরোক্ত সমস্যার সমাধান করে তা সোলার ক্যালেন্ডারের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করা যেতো এবং সেই হিজরি বছরটি হতো ১৩ মাসের বছর। আর, এরুপ সামঞ্জস্য বিধানকারী ক্যালেন্ডারকে বলে Lunisolar Calendar । হিব্রু, জৈন, ট্রাডিশনাল চাইনিজ ক্যালেন্ডার একেকটি লুনিসোলার ক্যালেন্ডার। কিন্তু হিজরি ক্যালেন্ডারকে লুনিসোলার করা যাচ্ছে না আল্লাপাকের নিষেধাজ্ঞার কারনে। নিম্নোক্ত আয়াতটিই বাধা। আল্লাপাকের গননায় মাস ১২ টি। ১৩ মাসে বছর গননা করলে আল্লাপাকের আরশ কেঁপে উঠতে পারে।

Quran 9:36

নিশ্চয় আল্লাহর বিধান ও গননায় মাস বারটি, আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকে। তন্মধ্যে চারটি সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান;…

যাহোক, এসকল কারনেই আল্লাপাকের সুপারিশকৃত ধ্বজভঙ্গ হিজরী ক্যালেন্ডারকে মানুষ আর ব্যবহার করছে না।

কোরানে বিগ ব্যাং

কোরানে কি সত্যিই বিগ ব্যাং এর উল্লেখ রয়েছে? এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিম্নোক্ত লিঙ্কে ক্লিক করুন।

আল কোরআনে বিগ ব্যাং

 

[ This was inspired by Harry Foundalis ]

10 thoughts on “কোরানে মহাউন্মাদীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান

  1. Anonymous

    বুঝলাম আল্লাহ একটা গাজাখোর সাথে মোহাম্মদ একটা ডাইল খোর

    Like

  2. Anonymous

    পোস্ট টি যে করেছে হেই বেডা একটা বোকাচোদা ১ নো মূর্খ . যার কোনো ধারণা নাই . হারামি নিজেও জাহান্নামে যাবে আবার অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে . যাদের জ্ঞান হয় না আল্লাহ তাদের সম্পর্কে বলেছেন ওরা বধির তাই ওরা বলতে পারে না . আবার ওরা অন্ধ তাই তারা দেখতে পে না . যার হেদায়েতের ইচ্ছে নাই আল্লাহ তাদেরকে কখনো হেদায়েত ডেবেন না . আল্লাহ আমাকে মাফ করুন আমার বাবা মেক এবং মুমিন বান্দাদের আমিন .

    Like

    1. Sudeepta Sarkar

      আপনি যুক্তিছাড়া গালি দিতে পারেন না। আপনার সপক্ষে প্রমান দাখিল করুন। আপনার যুক্তি সঠিক হলে আমি নাস্তিকতা ছেড়ে দেবো।

      Like

  3. Pingback: কোরানে বিগ ব্যাং – আক্কাস আলী'র ব্লগ

    1. সাকিব

      Science with Quran – Abdul Aziz Khandaker
      পবিত্র কোরআনে তারকা বিজ্ঞান –Astronomy in the holy quran
      abdulazizkhandakar abdulazizkhandakar
      4 বছর পূর্বে
      Advertisements

      সূধী পাঠক, মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রচলিত ইতিহাস খুবই প্রাচীণ, এর জানা প্রকৃত ইতিহাস আজও মানুষের ভাল জানা নেই; প্রাপ্ত ইতিহাস থেকে যতটা বুঝা যায় তাতে মনে হয়; মস্তিস্কে চিন্তাধারার অগ্রযাত্রায় মানুষ মহাজাগতিক বস্তু নিলয়কে তাদের মনের মত করে নানাভাবে নানা কাঠামো দাঁড় করিয়েছে; বাহ্যিক দৃষ্টি থেকে প্রাপ্ত ধারণার উপর বিত্তি করে প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা পৃথিবী কেন্দ্রিক এক মহাকাশের চিন্তা পোষণ করতেন; তাদের গ্রহ পরিচিতি জানা চিল, মনে করতেন আকাশে পাঁচটি গ্রহ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে বেড়ায়। অন্যান্য তারা গুলোকে স্থীর অবস্থানে স্বর্গীয় প্রদীপ মনে করতেন। দৈনন্দিন দৃশ্যপট থেকে তাদেরও ধারণা হয়েছিলযে, ঝুলন্ত প্রদীপ গুলোকে নিয়ে আকাশ নামক গোলকটি প্রতিদিন রাতে পশ্চিম থেকে ঘুরে এসে পূবের আকাশে সাকাল বেলায় উদিত হয় দিন শেষে আবার পশ্চিম আকাশে অস্ত যায়, সূর্যো তাদের দল নেতা; এভাবেই চলে মহাকাশের সকল বস্তু। তারাগুলো আমাদের বায়ু মণ্ডলে মেঘের উপরে ঝূলন্ত অবস্থায় থাকে। গণিতবিদ পিথাঘোরাস সর্ব প্রথম পৃথিবী কেন্দ্রীক এই ধারণা দিয়েছিলেন। দার্শনিক এরিষ্টোটলও এই ধারণায় বিশ্বাসী ছিলেন। খৃষ্ট জন্মের প্রায় শত বর্ষ পূর্বে গ্রীক দার্শনিক টলেমি এই ধারণাকেই পাকা পোক্ত করে দিলেন। খৃষ্ট জন্মের পরেও প্রায় হাজার বছর ধরে এই ধারণাই মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে রইল। অনেকের বিরোধীতার পরেও ১৪০০ সাল পর্যোন্ত টলেমীর পাকা করে দেওয়া প্রস্তাবই মানুষের মনে বদ্ধমূল হয়ে রইল। শুধু গ্রীক নয় সারা পৃথিবীর মানুষের কাশে এই পৃথিবী কেন্দ্রীক আকাশই পরিচিত হয়ে রইল। ১৫৪৩ সালে বিজ্ঞানী কোপার্নিকাস জিওসেন্ট্রিক বা পৃথিবী কেন্দ্রীক ব্যবস্থার বিরোধীতা করে বললেন সৌর ব্যবস্থার কেন্দ্রে স্থির সর্যো রাজকীয় সিংহাসনে বসে তার চারিদিকের গ্রহ সদস্যদের নিয়ন্ত্রন করে। এই তত্ত্বটি বিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইল ফলক হয়ে রইল। ধীরে ধীরে বিজ্ঞানীদের মনে ধারণা জন্মাতে লাগল যে, আকাশে কোটী কোটী তারার সমাবেশ রয়েছে আর এরা আমাদের পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। ১৬০৯ সালে গ্যালিলিওর টেলিস্কোপ আবিস্কারের ফলে বিজ্ঞান জগতে ঝড় উঠল, আর বিজ্ঞানীদের মনে ধারণা পাল্টাতে লাগল। দূরবীণ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মহাকাশ পর্যোবেক্ষণ করে বিজ্ঞানীরা বললেন আমাদের সৌর জগৎ্‌কে বিশাল ব্যাপ্তির তারা দলেরই একাংশ। তারা এই তারাদলেল নাম দিলেন ছায়াপথ। তাদের ধারণা হল আমাদের এই ছায়াপথ নিয়েই সমগ্র মহাবিশ্ব ব্যাপৃত। অনেক চিন্তাশীলরাই মহাকাশ নিয়ে ভাবতে লাগলেন, চিন্তার পথধরে ধীরে ধীরে মহাকাশে উদ্ভাসিত হতে লাগলো তারার জগৎ। সময়ের অগ্রযাত্রায় বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে হাবল টোলিস্কোপ আবিস্কৃত হওয়ার পর মহাকাশের চিত্র পাল্টে যেতে লাগল, আবিস্কৃত হতে লাগল কোটি কোটি তারা আর অসংখ্য ছায়াপথ। নতুন করে চিত্রায়িত করতে হল আমাদের মহাবিশ্বকে।

      বিজ্ঞানীদের মনে প্রশ্ন দাঁড়াল- আমাদের এই মহাবিশ্ব কি করে সৃষ্টিতে এল? যদিও এ প্রশ্ন প্রাচীন কালের, তথাপি কারও কাছেই এর সঠিক জবাব পাওয়া গেলনা, নানা মুণি নানা মতবাদ দিতে লাগলেন। বিজ্ঞানীদের গবেষণাও চলতে লাগল নিরন্তর। অবশেষে বিংশ মতাব্দীর শেষের দিকে এসে বিজ্ঞানীরা একমত হলেন যে, আমাদের মহাবিশ্ব প্রায় ১৫০০ কোটি বছর আগে যখন কোন কিছুই ছিলনা তখন কোন এক মহাবিস্ফোরণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। এই কোন কিছুই ছিলনা বলতে যা বুঝায় তা হল – ছিলনা সময়, না ছিল কোন শূণ্য স্থান, এমনকি মহাজাগতিক বস্তু নিলয় সৃষ্টির কোন রসদও মজুদ ছিলনা।এমন একটা অবস্থায় শক্তির ঘণায়ন থেকে ঘটে মহাবিস্ফোরণ আর সেই বিস্ফোরণ তেকে বিচ্ছুরিত শক্তি ধীরে ধীরে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে তৈরী হয়েছে পদার্থ; যা আজকের মহাকাশ জুড়ে রয়েছে প্রদীপমালা রূপে। বিজ্ঞানীদের এই ধারণা বেশ সমাদৃত হয়ে উঠে। তবে তারা এই শক্তির ঘণায়নের উৎস সম্পর্কে কোন তথ্য দেয়নি, শুধু মাত্র তার উপস্থিতিকে মেনে নিয়েচে। বস্তুবাদীরা এই তত্ত্বকে মেনে না নিলেও বক্তব্য বিষয় অধিকাংশ ভাবুকদেরই মনে ধরেছে তাই এই মহাবিস্ফোরণ বা বিগ ব্যাঙ তত্ত্ব আজও সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য হয়ে রয়েছে।

      সূধী পাঠক বিজ্ঞানীদের ধারণায় এই সৃষ্টি প্রকিয়া ও তার বিবর্তন অনেক জটিল বিষয় ও দীর্ঘ মেয়াদী। সে যাই হোক, সৃষ্টি প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ আমাদের লক্ষ্য নয়, আমরা দেখবো বিজ্ঞানের এ সকল প্রক্রিয়া সম্পর্কে কোন আলোকপাত করা হয়েছে কি না! অর্থাৎ মহাবিকাশ সৃষ্টি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে কি বলেছেন। পবিত্র কোরআন দ্বারা বিজ্ঞানকে অনুমোদন করানো বা পবিত্র কোরআনকে বিজ্ঞান গ্রন্থ প্রমাণ করা নয়। আমাদের মৌলিক লক্ষ্য হল পবিত্র কোরআনের অলৌকিকতা প্রমান করা। কালন অবিশ্বাসীরা বলে থাকেন যে, এই গ্রন্থটি নবী মোহাম্মদ কর্তৃক রচিত।

      সূধী পাঠক এবার আমরা দেখব মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে মহাকাশ সৃষ্টি প্রসঙ্গে কি বলেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ ন বলছেন,

      وَالسَّمَاء بَنَيْنَاهَا بِأَيْدٍ وَإِنَّا لَمُوسِعُونَ

      ৫১:৪৭ আমি অসীম শক্তিদ্বার আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমি অবশ্যই ইহার সম্প্রসারক। সূরা- আয যারিয়াত

      وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَيَوْمَ يَقُولُ كُن فَيَكُونُ قَوْلُهُ الْحَقُّ وَلَهُ الْمُلْكُ يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّوَرِ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ

      ৬:৭৩ তিনিই সঠিকভাবে নভোমন্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ হয়ে যা, অতঃপর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। -আল আনাম

      أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنَّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ كَانَتَا رَتْقًا فَفَتَقْنَاهُمَا وَجَعَلْنَا مِنَ الْمَاء كُلَّ شَيْءٍ حَيٍّ أَفَلَا يُؤْمِنُونَ

      ২১:৩০ কাফেররা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল, অতঃপর আমি উভয়কে খুলে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সবকিছু আমি পানি থেকে সৃষ্টি করলাম। এরপরও কি তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে না? – সূরা আম্বিয়া

      সূধী পাঠক উপরের উদ্ধৃত ৫১:৪৭ ও ২১:৩০ আয়াত দুটির দিকে লক্ষ্য করুন কি বলছেন মহান আল্লাহ্? হুবহু বিজ্ঞানীদের উক্তি যা আজকের বিজ্ঞান সবেমাত্র আবিস্কার করেছে, অথচ মহান আল্লাহ্ তা বর্ণনা করেছেন প্রায় ১৫০০ বছর আগে।

      পৃথিবীর আকৃতি

      أَلَمْ تَرَ أَنَّ اللَّهَ يُولِجُ اللَّيْلَ فِي النَّهَارِ وَيُولِجُ النَّهَارَ فِي اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي إِلَى أَجَلٍ مُّسَمًّى وَأَنَّ اللَّهَ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ

      31:29 তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন? – সূরা লোকমান।

      خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ بِالْحَقِّ يُكَوِّرُ اللَّيْلَ عَلَى النَّهَارِ وَيُكَوِّرُ النَّهَارَ عَلَى اللَّيْلِ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُسَمًّى أَلَا هُوَ الْعَزِيزُ الْغَفَّارُ

      39:5 তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সুর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। -সূরা আল যুমার

      উপরের আয়াত দু’টিতে মহান আল্লাহ ভাবুক শ্রেণীর জন্যে বৈজ্ঞানীক ইঙ্গিত প্রধান করেছেন। এখানে বলা হয়েছে, তিঁনি রাতকে দিনের মধ্যে প্রবিষ্ট করান তথা রাতকে দিন দ্বার আচ্ছাদিত করেন অনুরূপভাবে দিনকে রাত দ্বারা। এই আচ্ছাদিত করণ শব্দটির ব্যবহার অত্যান্ত সুচিন্তি। আমরা প্রতিনিয়তই দিবা-রাত্রির পরিবরর্তন অর্থাৎ রাত থেকে দিনের আগমন ও দিন তেকে রাত এই উভকে লক্ষ্য করে থাকি; আমরা দেখি রজনীর শেষ ভাগে দেখতে পাই ধীরে দীরে অন্ধকার দূর হয়ে আলোর রেখা ফুটে উঠে আবার দিন মেষে ধীরে ধীরে আলো কমে অন্ধকার নেমে আসে। বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, কোন গোলাকার বস্তু আলোক উৎসের সামনে থাকলে তার এক অর্ধ আলোকিত থাকে, অপর অর্ধেক থাকে অন্ধকারে। বস্তটি যদি ঘূর্ণনশীল হয় তবে ধীরে ধীরে তার অন্ধকার অংশ আলোর দিকে আসে আর আরোকিত হয় অন্ধকার দিক; এ ভাবে চলে আলোঅন্ধকারের খেলা । লক্ষ্যনীয় বিষয় হল,অন্ধকার কেছে ধীরে ধীরে আলোকিত হওয়া, যাকে বলা হয় আচ্ছাদিত হওয়া। এই ভাবে আচ্ছাদিত হয় একমাত্র গোলাকার বস্তু। যদি বস্তুটি গোলাকার না হয়ে সমতল বা চতুস্কোন তবে ঘূর্ণনরত অবস্থায় তার এক এক তল হঠাৎ হঠাৎ আলোকিত হয়ে পড়বে; পরিবর্তণ ধীরে ধীরে হবেনা অর্থাৎ আচ্চাদিত হবেনা হবে হঠাৎ পরিবর্তন; আমদের পৃথিবীর বেলায় এমনটা ঘটেনা ঘটে আচ্চাদনের ঘটনা। তাহলে পরিস্কা হয়ে গেল এই প্রবিষ্টকরণ বা আচ্ছাদিত করণ উভয়ই পৃথিবীর গোলত্বের প্রমান। মহান আল্লঅহ পবিত্র কোরআণে এমনিভাবে তার ভাবুক বান্দাদের জন্যে অনেক ইঙ্গিতপূর্ণ বাণী উল্যেখ করেছেন।
      وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا

      70:30 পৃথিবীকে এর পরে বিস্তৃত করেছেন।

      এখানে دَحَاهَا – এই শব্দটির আবিধানীক অর্থ –বিস্তৃত করা ; শব্দটির دَحَا অংশটি পুরুষ বাচক ক্রিয়া যার অর্থ বিস্তৃত করা, অপর অংশ هَا , এই অংশটি স্ত্রী বাচক সর্বনাম, এখানে পৃথিবীকে বুঝানো হয়েছে। এই আয়াতটিকে বিভিন্ন ভাবে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, কেউ কেউ বলছেন ‘দাহাহা’ শব্দটি দিয়ে গোলাকার করণ বুঝানো হয়েচে, অর্থাৎ এই শব্দটি দিয়ে উট পাখীর ডিমও বুঝানো হয়। তা’হলে এই অয়াতটির তাৎপর্যো হতে পারে যে মহান আল্লাহ্ পৃথিবীকে উট-পাখীর ডিমের আকৃতি দিয়েছেন। এখন আমরা বৈজ্ঞানীক দৃষ্টিকোন থেকেও এই বৃস্তিতিকরণের ধারণা দেখবো। বিজ্ঞান বলছে, মহাজাগতিক বস্তু সমুহ ঘনিভূত শক্তি থেকে এক মহা বিস্ফোরণের মাধ্যামে গ্যাসীয় অবস্থায় সৃষ্টি হয়, তার পর বহু সময়ের বিবর্তনে পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করে। পূর্ণাঙ্গ অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে থাকে পরিনতির দিকে। কোন কোনটির পরিণতি ঘটে আরেকটি বিস্ফোরণের মধ্যে অথবা বৃদ্ধ অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে পরিণত হয় মাটির ঢিবিতে। প্রতিটি মহাজাগতিক বস্তুই জন্মের পর থেকে তার সৃষ্টি বৈশিষ্ট রূপে প্রাপ্ত হয় ঘূর্ণন গতি। যখন মহাজাগতিক মেঘমালার মধ্যে কোন ণক্সত্র জনামলাভ করে তখন আর আকৃতি সুনির্দিষ্ট থাকেনা, এই ঘূর্ণন গতি প্রাপ্ত হয়ে সুনির্দিষ্ট আকৃতি প্রাপ্ত হতে থাকে। বিজ্ঞান বলছে যে কোন নমনীয় বস্তু ঘূর্ণনশীল হলে ত ধীরে ধীরে গোলাকার আকৃতি ধারণ করে। এ্ই নিয়ম সৃষ্টিগত ভাবেই প্রাপ্ত হয়ে থাকে। এমতাবস্তায় বলা যায় যে,আমাদের পৃথিবীও অন্যান্ন মহাজাগতিক বস্তুর ন্যায় বৈশিষ্ট প্রাপ্ত, ফলে বলাযায় যে, আমাদের বর্তমান পৃথিবীও তেমনি এক গোলাকার ঘূর্ণন শীল মহাজাগতিক বস্তু। সম্ভবত মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে পৃথিবীকে বিস্তৃত করণ প্রসঙ্গে এই প্রক্রিয়ার কথাই বলেছেন (তিঁনিই জানেন ভাল) ।

      মহাজাগতিক বস্তুর আবর্তন

      সূধী পাঠক,প্রাচীন কাল থেকেই মানুষের চেতনায় মহাকাশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে, যুগে যুগে মণিষীগণ তাদের নানা চিন্তা আমাদের উপহার দিয়েছেন। চিন্তা গবেষণার ক্ষেত্রে মানুষের দুটি ইন্দ্রীয় বিমেষ ভূমিকা রাখে, তা হল মস্তিষ্ক আর চক্ষু-অর্থাৎ দৃষ্টি। দৃষ্টি যত প্রসারিত হবে, মস্তিস্কে ভানার ক্ষ্রেও ততবড় হবে। মহাকাশ নিয়ে চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে, টলেমির ভূকেন্দ্রীক বিশ্ব ব্যবস্থাকে তৎকালী বিজ্ঞান যে ভাবে বর্ণনা করেছে তা দীর্ঘ সময় ব্যপি চলেআসছিল, ১৬ শতাব্দীর গোড়ার কোপার্নিকাসের প্রসারিত দৃষ্টি সে ব্যবস্থাকে ভেঙে দিল। খালি চোখে তিনি আরও একটু বেশী দেকতে পেলেন, তার সূর্যো কেন্দ্রীক সৌর ব্যাবস্থা মনুষের দৃষ্টিকে আরও একটু প্রসারিত করে ধরল। ১৬০৯ সালে কেপলার সেই দৃষ্টিকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে বললেন, গ্রহগুলি শুধুমাত্র তাদের কক্ষ পথেই সূর্যোকে প্রদক্ষিন করেনা তার তাদের নিজ নিজ অক্ষের উপরও ঘূর্ণনশলি। একই বছরে গ্যালিরিও তার দূরবীন যন্ত্র আবিস্কারের মাধ্যামে মহাকাশকে অরও কাছাকাছি নিয়ে এলেন, তিনি বললেন শুদু গ্রহ জগৎ নয় মহাকাশের সকল বস্তুই ঘূর্ণনশীল। বিজ্ঞান তারপরেও সূর্যোকে তার আসনে স্থির করেই রাখলেন।তারপর বিজ্ঞানের জয়যাত্রা; মহাকাশ চষে বেড়াচ্ছে আজকের বিজ্ঞান।বিজ্ঞান সপ্তদশ শতাব্দীতেও যা পারেনি তা অন্ধকার যুগে বলে রেকেছে পবিত্র কোরআন; অথচ এই আরবী হরফের আড়ালে মহান প্রভু মানব কুলকে কিসের ধারণা দিয়েরেখেন তা কেউ জানলনা, কেউ জানার চেষ্টা করলনা, শুধু তাকিয়ে রইল বিজ্ঞান কি বলে, ভেবে দেখলনা কোরআন কি বলে।হয়তো বলবেন, কোরআনের এই বাণী বিজ্ঞানে সামনে তুলে ধরা হয়নি বলে বিজ্ঞান তা আমলে নেয়নি।আসলে কি তাই?পবিত্র কোরআনের এই সকল বাণী কি আমার মত মূর্খের জন্যে এসেচে? না! এ গুলো এসেছে বিজ্ঞানীদের জন্যে-যারা ভাবনা চিন্তা করে। তাকিয়ে দেখা, বুঝে নেওয়াতো ভাবুকের কাজ, মূর্খের নয়, আর এ জন্যে তাদেরকেই জবাবদিহি করতে হবে। হয়তো ভাবুকরা ভাবছেন কোরআনের বাণী মেনে নিলেতো তার রচয়ীতাকেও মানতে হবে! তাই হয়তো এদিকটায় তাদের আগমন ঘটেনি ফলে বিজ্ঞানের এতবড় তথ্য মানুষের অগোচর রয়েগেছে দীর্ঘকাল। আজ যখন বিজ্ঞান তার ভাবনাচিন্তা থেকে বলল, আমাদের সূর্যিমামা আর স্থির নেই তারও রয়েচে উভয়বিধ ঘূর্ণি। তখনই আমরা কিছু আবেগি লোক বলে বসলাম এই তো কোরআনেও রয়েছে! সূখের বিষয় এই যে, দেরীতে হলেও আমরা তা অনুধাবন করতে পেরেছি।শুধু ঘূর্ণি নয় সূর্যের ভবিষ্যত নিয়েও কোরআন তথ্য দিয়েছে ; আরও দিয়েছে এই মহাবিশ্বের শেষ পরিনতির বৈজ্ঞানীক তথ্য।লক্ষ্য করুন সূরা আম্বিয়ার ৩৩ নং আয়াতটি,

      وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

      ২১:৩৩ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। এখানে ব্যবহৃত শব্দ يَسْبَحُونَ অত্যান্ত তাৎপর্যোময়; এই শব্দটি ‘সাবাহ্’ শব্দ তেকে উৎপন্ন হয়েছে,যা দিয়ে গতিশীল বস্তুকে বুঝানো হয়।এই গতির প্রকৃতি আমাদেরকে বুঝে নিতে হবে আবার অনেক চিন্তাবিদ মনে করেন যে, আয়াতটিতে মহান আল্লাহ শুধুমাত্র চন্দ্র সূর্যের গতিময়তার কথাই বলেছেন।

      এখানে

      وَالسَّمَاء ذَاتِ الرَّجْعِ

      86:11 শপথ চক্রশীল আকাশের -সূরা আত্ব-তারিক

      এখানে وَالسَّمَ শব্দটির তরজমা করা হয়েছে ‘চক্রশীল’ অর্থাৎ চক্রাকারে ঘুরে আসা। শব্দটির ধাতুগত অর্থ হল ফিরে আসা। এখন কথা হল ফিরে আসা কাজটি নানাভাবে করা যায়, অর্থাৎ সোজাপথে গিয়ে ফিরে আসা আবার বক্রপথে গিয়ে ফিরে আসা বা গোলাকার পথে ফিরে আসা। এখানে কোন অবস্থা ধর্তব্য? এরও একটা প্রশ্ন হল আকাশ বলতে আমরা কি বুঝি? যেহেতু আকাশ বলতে সুনির্দিষ্ট কোন বস্তু নেই ফলে আকাশ বা মহাকাশ বলতে আমরা মহাবিম্বের সকল বস্তু সামগ্রিকে বুঝে থাকি; তাহলে চক্রশীল আকাশ বা আকাশের ফিরে আসা বলতে মহাবিশ্বের বস্তু সামগ্রির ফিরা আসা বুঝায়। এখন আমাদেরকে বুঝতে হবে এই ফিরে আসাটা কোন পথে ঘটে থাকে? আমরা জানি আমাদের দৃশ্য আকাশে সূর্যোকে কেন্দ্র করে অন্যান্য গ্রহগুলো আবর্তন করছে। সম্ভবতঃ সে কারণেই বোধ হয় প্রতিদিন সর্যো পূর্ব দিকে উদিত হয়ে পশ্চিমে অস্ত যায়।সারা দিনমান সর্যোকে আমরা প্রায় একই আকৃতিতে দেখি অর্থাৎ উভয়ের মধ্যে দূরত্ব সবসময় প্রায় সমান থাকে। বিজ্ঞান বলছে দু’টি বস্তু মধ্যে একটি যদি অপরটিকে কেন্দ্র করে ঘূরে আর তাদের দৃশ্য আকৃতি উভয়টা থেকে সমান দেখা যায় তবে বলতে হয় প্রথমটি দ্বিতীয়টিকে চক্রাকার বা গোলাকার পথে প্রদক্ষিণ করছে। এবার পরিস্কার করেই বলা যায় যে, পবিত্র কোরআন বলছে মহাকাশের বা মহাবিম্বের সকল বস্তুই গোলাকার পথে ফিরে আসছে বা ঘুরছে। যেহেতু শব্দটি দিয়ে ফিরে আসা বা পথ অতিক্রম করা বুঝায় ফলে বলাচলে যে, এখানে মহাজাগতীক বস্তু সমুহের কক্ষ পথে আবর্তনের কথাই বলা হয়েছে। আজকের বিজ্ঞানও পরীক্ষা নীরিক্ষা করে একমত হয়েছে যে ছায়াপথগুলি তাদের সকল বস্তু সামগ্রি নিয়ে নিজ অক্ষের চারিদিকে ঘরছে; ফলে প্রতিটি বস্তুর জন্যে একটি বৃত্যাকার কক্ষপথ তৈরী হচ্ছে। বিষয়টাকে ঘুরিয়ে বলা যায়, ছায়াপথের সকল বস্তুই কক্ষ পথে আবর্তন করছে। আবার নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে গ্রহগুলোর ঘূর্ণন বিষয়টা সেই নক্ষতের পারিবারিক বিষয়।আর এ বিষয়টাকেও মহান আল্লাহ উপরে বর্ণিত ২১:৩৩ আয়াতে পরিস্কার করে ঘোষনা করেছেন। এই দু’টি আয়াতে আমরা গ্রহ ণক্ষত্র ও অন্যান্য মহাগতিক বস্তু সমুহের গতিময়তা ও কক্ষ পথে আবর্তনের বিষয়ে পরিস্কার ধারণা পেলাম।আজকের বিজ্ঞান বিভিন্ন বস্তুর এই আবর্তনের গতি ও পর্যায়কাল হিসেব করতে সক্ষম হয়েছে, হিসেবে দেখা গেছে, সূর্যি মামা মিল্কিওয়ে ছায়াপথের কেন্দ্রকে প্রতি সেকেন্ডে ১৫২ মাইল গতিতে ২০০ মিলিয়ন বছরে একবার প্রদক্ষিন করে। মহাজাগতিক বস্তু সমুহ কক্ষপথে আবর্তনের আরও একটি আয়াত লক্ষ্য করুন,

      لَا الشَّمْسُ يَنبَغِي لَهَا أَن تُدْرِكَ الْقَمَرَ وَلَا اللَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

      ৩৬:৪০ সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি অগ্রে চলে না দিনের প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে সন্তরণ করে।

      সূধী পাঠক, এখানে وَكُلٌّ শব্দটির ব্যবহার অত্যান্ত চমকপ্রদ। আয়াতের তরজমায় শব্দটির অর্থ করা হয়েছে ‘প্রত্যেকে’ ইংরেজীতে যাকে বলা হয় each, ইংরেজীতে এই শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যাক্তি বা বস্তুর সর্বনাম হিসেবে; কিন্তু all শব্দটি ব্যবহৃত হয় অনির্দিষ্ট সংখায় বুঝাতে। উপরের আয়াতে মহান আল্লাহ প্রথমে চন্দ্র-সূর্যের কথা বলেছেন, তারপর তাদের সাথে রাতদিনের সম্পর্কের কথা বলেছেন; তার পর ব্যাবহার করা হয়েছে কুল্লুন শব্দটি; প্রেক্ষাপট অনুযায়ী তরজমা কারীরা ‘প্রত্যেকে’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।কিন্তু আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘প্রত্যেকে’ শব্দের আরবী শব্দ হল ‘কুল্লি’ (كُلِّ)।মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনেও তেমনি অসংখ্য বুঝাতে كُلٌّ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। উপরের আয়অতে চন্দ্র সূর্যের উপমা টেনে তিনি সকল মহাজাগতিক বস্তুর আবর্তন বৈশিষ্টের কথাই বলেছেন। আবার يَسْبَحُونَ শব্দটি দিয়ে সন্তরণ অবস্থা বুঝিয়েচেন, অর্থাৎ মহাশূণ্যে ভাসমান অবস্থায় তারা নিজ নিজ কক্ষপথে আবর্তন করে।

      মহাজাগতিক বস্তুর স্থায়িত্ব কাল

      সূধী পাঠক, মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে মহাকাশের বিভিন্ন দিক নাণা ভাবে বর্ণনা করেছেন নানা ইঙ্গিতের মাধ্যামে।তিনি শুধু ইঙ্গিত দিয়েছেন মাত্র,কারণ মানুষের ভাববার অবকাশদিয়েছেন, মেধার ক্রমবিকাশের পাশাপাশি মানুষ তার চিন্তাভাবনা নিয়ে যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই বিষ্ময়কর ভাবে পবিত্র কোরআনের বাণী গুলো মানুষের কাছে বিস্তারিত ভাবে প্রকাশিত হয়ে তার অন্তস্থ ভাবধারা বেরিয়ে আসছে। আমরা অবাক হয়ে দেখছি, পবিত্র কোরআনের নির্ভুল বাণী শতধা হয়ে কিভাবে মানুষকে পথ দেখাচ্ছে,শুধু তাই নয় প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে মানুষকে কত ভাবে সাহায্য করছে। আজকের বিজ্ঞান যে তথ্য নতুন করে উপহার দিচ্ছে, পবিত্র কোরআন খুললে দেখা যাচ্ছে তা কোরআনেরই উপজীব্য।নতুন কিছু পবিত্র কোরআনের পাতায় পুরানো হয়ে আছে।আজকের বিজ্ঞান মানুষকে অবাক করে দিয়ে বলছে আমাদের সূর্যের আয়ুস্কাল আর মাত্র ৫শত কোটি বছর; অর্থাৎ আমাদের সূর্যে বর্তমানে যে পরিমান জ্বালানী মজুদ রয়েছে তা জ্বলে-পুড়ে শষ হতে আরও ৫০০ কোটি বছর সময় লাগবে, এই সময়ের পর সূর্যের দেহটা হয় ভারী মৌলে ভরপুর হয়ে নিঃস্প্রভ হয়ে আসবে এবং সর্বমেষে হয়তোবা আমাদের পৃথিবীর ন্যায় বিশাল এক মাটির ঢিবিতে পরিনত হবে অথবা এগিয়ে যাবে কোন এক সুপারনোভা বিস্ফোরণের দিকে। এবার দেখাযাক এ বিষয়ে পবিত্র কোরআন কি বলছে,

      وَالشَّمْسُ تَجْرِي لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

      ৩৬:৩৮ সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণ। -সূরা ইয়াসীন

      এখানে আয়াতটির তরজমায় বলা হয়েছে ‘সূর্যো তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে’; কিন্তু শব্দগুলোকে অলাদাভাবে তরজমা করলে দেখাযায়, تَجْرِي শব্দটির আভিধানিক অর্থ -দৌড়ায়, আর لِمُسْتَقَرٍّ শব্দটির অর্থ হল নির্দিষ্ট কাল। তাহলে অংশটির তরজমা দাঁড়ায় ‘সূর্যো দৌড়াবে সুনির্দিষ্ট নির্ধারিত কাল ব্যাপি’ আর এ ব্যবস্থা মহান আল্লাহ্র নির্দেশ। আজকের বিজ্ঞানের পরীক্ষা নীরিক্ষায় প্রমাণ হয়েছে যে আমাদের সূর্যি মামা এক সুনির্দিষ্ট অবস্থানের (ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ার নির্দারীত স্থান) দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। উপরের তরজমায় আরও বলা হয়েছে (সূর্যো তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে) আবর্তন করে; আসলে এই গতি তার আবর্তন গতি নয়; এ গতি তার অগ্রসরমান গতি; অর্থাৎ মিল্কিওয়ে ছায়াপথের অক্ষগতিতে আবর্তনের সাথে সাথে সম্প্রসারণের যে গতিতে সে আল্ফাসেন্টুরাই এর দিকে ।গিয়ে যাচ্ছে সে গতির কথা বলা হয়েছে।

      sun-centauri

      সৌর মণ্ডলে ঘূর্ণন ব্যবস্থা

      وَآيَةٌ لَّهُمْ اللَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ

      ৩৬:৩৭ তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়। – সূরা ইয়াসীন

      সূধী পাঠক, উপরের আয়াতটির দিকে লক্ষ্য করুন, বলা হয়েছে ‘তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি’; একানে লক্ষ্যনীয় বিষয় এই যে, পবিত্র কোরআনে যতবারই আলো-অধারীর কথা বলা হয়েছে ঠিক ততবারই অন্ধকার বা রাত শব্দটি আগে বলা হয়েছে; কিন্তু আমরা সাধারণতঃ আলো অন্ধকার একসাথে উল্যেখ করতে আলো শব্দটাকে আগে ব্যবহার করি,যেমন ‘আলো-আধার’।একটা কৌতুহলী প্রশ্ন তৈরী হয়, কেন মহান প্রভু সাধারণ নিয়ম ভঙ্গ করে এমনটা করলেন? আজকের বিজ্ঞান বলছে, আমাদের মহাবিশ্ব এক অন্ধকার পুরী। অন্ধকারের এই মহাসমুদ্রে ছায়পথগুলো নিছক ছোট ছোট আলোক বর্তীকা, নিতান্তই মহাসাগরে ছড়ানো ছিটানো কচুরী -পানার মত।এই ধারণাটা দিয়েছে আধুনীক যুগের মহাকাশ বিজ্ঞান। এবার বলুনত দেখি, ১৫শত বছর আগেকার এক অশিক্ষিত যুবক কি করে জানতো যে মহাকাশ অন্ধকারের রাজত্ব। আমাদের সৌর মণ্ডলের যে আলোকীয় ব্যবস্থা তা নিতান্তই সূর্যিমামার এই সামান্য সামান্য জ্বালানী টুকু প্রজ্জ্বলণে কারণে, এটুকু শেষ হয়ে গেলে আমরাও অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে যাব। পবিত্র কোরআনের বর্ণনার মধে এই যে বিচক্ষণতাই প্রমান করে যে, এই গ্রন্থ মানব রচিত নয়, এর সকল বাণী মহান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত। উপরের আয়াতটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় মহাবিশ্বের আলোময়তার কথা বলা নয়, এর মৌলিক লক্ষ্য হল সৌরমণ্ডলের আলোকীয় ব্যবস্থার মধ্যে সূর্যো ও তার পরিবারের সদস্যদের যে ঘূর্ণন ব্যবস্থা বিধিবদ্ধ রয়েছে তার পরিচয় প্রদান। মহান আল্লাহ্ রাতকে মানুষের জন্যে নিদর্শন করেছেন, অর্থাৎ মানুষ যেন রাতকে নিয়ে ভাবে- কিভাবে রাত শেষ হয়ে দিবসের শুরু হয় আর কিভাবেই বা দিবসের সমাপ্তিতে রাতের অন্ধকার নেমে আসে আর এই ঘটনাটি পর্যায়ক্রমে ঘটে যাচ্ছে। এই আলো-আধারীর খেলা পর্যায়ক্রমে ঘটে যাওয়ার পিছনেচিন্তাশীল লোকদের ভাববার বিষয় রয়েছে। মহান আল্লাহ্ও এই সকল লোকদের জন্যে পবিত্র কোরআনে সুনির্দিষ।ট পথরেখা এঁকে দিয়েছেন, চিনে নেওয়া তাদের দ্বায়িত্ব। সৌর মণ্ডলে চন্দ্র-সূর্যের ঘূর্ণন ব্যবস্থার সুনির্দিষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে কিন্তু পৃথিবীর বেলায় তেমন কিছু উল্যেখ নেই; নীচের আয়াতটিতে যদিওবা আবাসে বলা হয়েছে যে,‘ সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে’। তার্কিক বন্ধুরা এতে সন্তুষ্ট নয়, তারা বলেন, কোরআন পৃথিবীর ঘূর্ণন ব্যবস্থা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু বলেনি অর্থাৎ কোরআন অনুসারে পৃথিবী স্থির, যা বিজ্ঞান বিরোধী; অতএব কোরআন অলৌকিক গ্রন্থ নয়।

      وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ كُلٌّ فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

      ২১:৩৩ তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে। এখানে ব্যবহৃত শব্দ

      সূধী পাঠক, এমতাবস্থায় ভাবুকরা বেকায়দায় পরেছেন বটে, তবে যাঁর বাণী নিয়ে তারা ভাবছেন তিঁনিই তাদেরকে উদ্ধারের পথ এঁকে দিয়েছেন পবিত্র কোরআনে সূরা ইয়াসীনের ৩৭ নং আয়াতে; মহান আল্লাহ্ বলছেন,‘ তাদের জন্যে এক নিদর্শন রাত্রি, আমি তা থেকে দিনকে অপসারিত করি, তখনই তারা অন্ধকারে থেকে যায়’। কিন্তু এখানেতো পৃতিবীর ঘূর্ণন সম্পকে কিছু বলা হয়নি! আমরা জানি, মহান আল্লাহ্ কিছু কিছু আয়াত ভাবুকদের জন্যে নাযিল করেছেন, সম্ভবতঃ এ আয়াতখানিও তাদেরই জন্যে, একটু ভেবে দেখতে হবে কি ভাবে মহান প্রভু পৃথিবীর ঘূর্ণন ব্যবস্থার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বাস্তব অবস্থা ও পবিত্র কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী একটা বিষয় পরিস্কার যে মহাজাগতিক বস্তুগুলো মহাবিশ্বের বিশাল শূণ্যতায় ভেসে আছে। একন প্রশ্ন হল তাদের ঘূর্ণন ব্যবস্থা নিয়ে। সে ক্ষেত্রেও কিছু কিছু সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। ৩৬:৩৭ আয়াতে মহান আল্লাহ্ রাতকে নিদর্শণ বলে নৈন্দিন বাস্তবতার কথা বলেছেন,, এই রাত ও দিন পর্যায়ক্রমে আবির্ভূত হওয়ার কালে আমরা দেখতে পাই সূর্যো পূর্বদিকে উদিত হয়ে পশ্চিমদিকে অস্ত যায়; এখন আমরা যদি ধরে নেই যে, এই উদয় অস্তে পৃথিবীর চারিদিকে সূর্যোই ঘুরে আসে, অর্থাৎ পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্যো প্রতি ২৪ ঘন্টায় একবার প্রদক্ষি করে এবং তার পূণরাবৃতি ঘটে; এমতাবস্থায় আমারা ভেবে দেখি আমাদের সৌর মণ্ডলে অন্যান্য গ্রহগুলোর কি অবস্থা হতে পারে! আমরা জানি ও লক্ষ্য করলে দেখতে পাই যে, সর্যের চারিদিকে প্রায় একই সমতলে ক্রমানুসারে বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস নেপচুন ও প্লুটো অবস্থান করছে,েএই অবস্থানের প্রেক্ষিতে সূর্যো যদি তার নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে পূর্ণ সৌর মণ্ডলকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে তবে সৌর মণ্ডলের মহাকর্ষীয় সাম্যতা বিনষ্ট হয়ে যাবে, গ্রহগুলোএকে অপরের উপর আছরে পড়ে নিজেরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ অবস্থায় পৃথিবীকে কেন্দ্র করে র্সর্যের আবর্তন কোন প্রকারেই মেনে নেওয়া যায়না; ফলে রাত-দিন সংঘটনের ক্ষেত্রে আমাদেরকে মেনে নিতে হবে যে, পৃথিবী তার অক্ষের উপর প্রতি নিয় ঘুরছে।

      sun-ring

      পৃথিবীর এই গতিকে আহ্নিক গতি বলা হয়। পৃথিবী তার অক্ষের উপর ঘূর্ণতরত অবস্থায় প্রচন্ড গতিতে সূর্যোকে কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে। যদি আমাদের পৃথিবী সমেত অন্যান্য গ্রহগুলো সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিন না করত তবে তার সর্বক্ষণ একই অবস্থানে অবস্থান করত, কিন্তু বাস্তবে তা দেখা যায়না, আমাদের সাপেক্ষে প্রতি নিয়তঃই অন্যান্য গ্রহগুলোর অবস্থান পরিবর্তীত হয়।এই অবস্থান পরিবর্তই প্রমাণ করে যে, পৃতিবীসমেত সকল গ্রহই কক্ষ পথে বিচরণশীল এবং তাদের কক্ষপথগুলো সূর্যোকে কেন্দ্র করে। আমরা রাত-দিনের উপমা থেকে পৃথিবীর উভয়বিধ গতির সন্ধান পেলাম, অন্যান্ন গ্রহের বেলায়ও একই উপমা প্রজোয্য। এখন কথা হল, পবিত্র কোরআনের এই বাণী প্রায় ১৫ শত বছরের পূরানো অথচ তার দেওয়া এই তথ্যগুলো আজকের বিজ্ঞান প্রমান করছে। সূধী পাঠক, এর পরেও কি কোন তার্কিক বন্ধু বলতে পারেন যে, পবিত্র কোরআন মানব রচিত। বলার একটা সুযোগ আছে বটে, বলতে পারেন পবিত্র কোরআনের এই সকল তথ্য কোন বড় বিজ্ঞানী দিয়েছে, কিন্তু ইতিহাস যে তা স্বীকার করেনা, ইতহাস বলছে ভিন্ন কথা, শুধু তাই নয় যীষুখৃষ্টের জন্মেরও বহু আগে থেকে অর্থাৎসেই প্লাটো –এরিষ্টোটলের যুগ থেকে মানুষ স্থির পৃথিবী ও ঘূর্ণায়মান আকাশ নিয়ে মানুষ ব্যাস্ত আর সেই ভুল ধারণা ভেঙ্গেছে ১৯বিংশ শতাব্দীতে এসে। আজকের বিজ্ঞান আবিস্কার করছে পবিত্র কোরআনের ইঙ্গিতময় তথ্য গুলোকে।

      সূধী পাঠক, উপরে আলোচিত আয়াতগুলো প্রসঙ্গে অনেক তার্কিক বলে থাকেন যে, এগুলো তো আমাদের দৃশ্য বিষয়, তৎকালীন যে কোন বুদ্ধিমান লোক সুক্ষ পর্যোবেক্ষণ থেকে এধরণের তথ্য দিতে পারে। মহান আল্লাহ্ যদি ইচ্ছে করেন তবে আমরা এই প্রবন্ধেরই পরবর্তী পর্বে তার্কীকদের এই কৌতুহলের নিবারণ ঘটাতে চেষ্টা করবো। আশীর্বাদ করুন মহান আল্লাহ যেন আমাদের সেই চেষ্টা সফল করেন।

      আবদুল আজিজ খন্দকার

      ৩১.৮.২০১৬

      Advertisements

      Share this:
      R

      Like

  4. Anonymous

    আরে বলদ!!!!তুই কোরঅনের সবকিছুই না জেনে বকবক করছিস কেন ??অল্লাহ পবিত্র কোরানে সূরা নাজিয়াতের ১৩ নং আয়াতে পৃথীবীকে তাহাহার আকৃতি বর্ণনা করেছেন (তাহাহার মানে উটপাখির ডিম)১৪০০ বছর আগে কিভাবে সূক্ষ ভাবে বণ্রনা করা হয়েছে নিশ্চই এটা মুহাম্মদ (স.)এর কাজ নয় ।আর চাদকে কোরানের সূরা ফোরকানের ৬১ নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে প্রদিপ নামে। আর আপনি সব কিছু না জেনে সাধারন মানুষের মাঝে ভিভ্রন্তি ছড়াচ্ছেন । আপনার মতো আসব্য,নির্ভোধ ও জ্ঞানের অপব্যবহকরি আমি দেখিনি । আর আপনি একটা কথা মাথায় রাখবেন কুরআন নাযাল হয়েছে সর্ব যুগের সব মানুষের জন্য । আর আল্লহ অবশ্যই ভালো করে জানেন কোন ভাবে লিখলে তার বান্দারা ভালো করে বুঝবে । আশা করি বিষয়টা অনুধাবন করবেন আমার প্রিয় মুসলিমরা । ওর কথায় কেউ কান দেবেন না ।

    Like

  5. Rakin Ahnaf

    অবশেষে তিনি যখন সুর্যের অস্তাচলে পৌছলেন; তখন তিনি সুর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।
    Aita tader dristikon theke bolse. Science er reference point name er kisu ase seta ki janen. Janle ai kotha bolten na.

    Like

Leave a comment